লিখেছেনঃ সুব্রত

শীত শেষ। গরম পড়তে শুরু করেছে। আর গরম কালে বিদ্যুৎ চালিত ফ্যান/পাখা আমাদের অতি প্রয়োজনীয় অপরিহার্য একটি যন্ত্র। আর এই যন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয় রেগুলেটর দিয়ে।অর্থাৎ ফ্যানের সাথে রেগুলেটর ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রেগুলেটর না থাকলে আপনার ফ্যানের জোর/গতি কম বেশি করতে পারবেন না। আর আমাদের প্রায় সকলেরই একটা কৌতুহল আছে যে,রেগুলেটর দিয়ে ফ্যানের গতি কম করলে কি বিদ্যুৎ খরচ কম হবে??নাকি জোরে চালালে যে খরচ হয়, গতি কম করলেও বিদ্যুৎ খরচ একই হয়??আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব এই বিষয়টা নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করি।

যদি কোথাও প্রশ্ন করা হয়,”ফ্যানের জোর কমালে বিদ্যুৎ খরচ একই থাকে না কি বিদ্যুৎ খরচ কম হয়??”এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় দুই রকম।কেউ বলবে বিদ্যুৎ খরচ একই থাকবে।আবার কেউ বলবে বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে। তারা দুজনেই মোটামুটিরকম সঠিক উত্তর দিয়েছে।কি?!!কনফিউজড হয়ে যাচ্ছেন তাইতো??আসলে বিদ্যুৎ খরচ কমবে কি কমবে না সেটা নির্ভর করবে কি ধরনের রেগুলেটর ব্যবহার করছেন তার উপর।রেগুলেটর সাধারণত দুই প্রকার।

(১) ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর।

(২) ইলেকট্রনিক রেগুলেটর।

আপনি যদি ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর ব্যবহার করেন তাহলে জোর কমালে বা বাড়ালে বিদ্যুৎ খরচ একই থাকবে।আবার আপনি যদি ইলেকট্রনিক রেগুলেটর ব্যবহার করেন তাহলে জোর কমালে বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে।জোর বাড়ালে বিদ্যুৎ বেশি খরচ হবে।

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক রেগুলেটর কিভাবে চিনবেন।

ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর : যে সকল বড় বড় রেগুলেটর আগে ব্যবহৃত হতো,সুইচ বোর্ডের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে এবং খুব গরম হয়।যদি খুলে দেখতে পারেন তাহলে দেখবেন,একটি লোহার কোর এর গায়ে প্রচুর পরিমাণে তামার তার পেঁচিয়ে তৈরি করা।(চিত্র :১)

ইলেকট্রনিক রেগুলেটর: এটা দেখতে অত্যন্ত ছোট সাইজের হয়।প্রায় একটা সুইচ এর সমান।সুইচবোর্ডে একটা সুইচ এর সমান জায়গা দখল করে।খুব সামান্য গরম হয়।যদি খুলে দেখতে পারেন, তাহলে দেখবেন,এটা একটি ভেরিয়েবল রেজিস্টর,একটা বা কয়েকটা ফিক্সড রেজিস্টর,ট্রায়াক,ও ক্যাপাসিটর দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটা সার্কিট।(চিত্র :২)

এবার আসি এদের কার্যপ্রণালী তে।

ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর:

ইলেকট্রিক্যাল রেগুলেটর তৈরি করা হয় মূলত আয়রন কোরের গায়ে তামার তার পেঁচিয়ে।বিদ্যুৎ এই তারের ভেতর দিয়ে অনেক দূরত্ব অতিক্রম করে প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছু বিদ্যুৎ তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়।ফলে ফ্যান পূর্ণ শক্তি পায় না এবং ফ্যানের রোটেশন/গতি কমে যায়।এতে মূল বিদ্যুৎ খরচ একই থাকছে।অর্থাৎ ফ্যানের জোর কমলেও বিদ্যুৎ খরচ কমছে না।কারন, রেগুলেটর কিছু বিদ্যুৎ শক্তি তাপ শক্তিতে অপচয় করে দিচ্ছে, ফলে ফ্যান কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং আস্তে ঘুরছে।

ইলেকট্রনিক রেগুলেটর: ইলেকট্রনিক রেগুলেটর তৈরি হয় সাধারণত একটি ভেরিয়েবল রেজিস্টর,একটা বা কয়েকটা ফিক্সড রেজিস্টর,ট্রায়াক,ও ক্যাপাসিটর দিয়ে। এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করে ট্রায়াক।ট্রায়াক এর সাথে ফিক্সড রেজিস্টর,ক্যাপাসিটর ও একটা ভেরিয়েবল রেজিস্টর দিয়ে একটা থাইরিস্টর জাতীয় ইলেকট্রনিক সুইচিং ডিভাইস তৈরি করা হয়।এটা মূলত খুব দ্রুত সুইচিং অর্থাৎ সংযোগ অন-অফ করার মাধ্যমে, ফ্যানের গতি কমিয়ে দেয়।আপনার নির্ধারণ করা পরিমাণে বিদ্যুৎ সাপ্লাই করে।এবং রেগুলেটর নিজে খুব সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ অপচয় করে।তাতে করে ফ্যানের জোর কমালে বিদ্যুৎ খরচ ও কমে যায়।